অডেস্কে ক্যারিয়ার গড়ো – ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করার রিভিউ


কিভাবে তুমি অডেস্কে ফ্রীল্যান্সার বা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করবে (নবীনদের জন্যে অডেস্কের একটি রিভিউ বা পর্যবেক্ষণ) ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে আমার একজন টুইটার ফলোয়ার আমার কাছে তার কোম্পানীর ওয়েবসাইট তৈরী করতে বলেছিল। কিন্তু আমি সেই সুযোগটা হাতছাড়া করলাম কারণ, আমার নিজের কোন পর্টফোলিও ছিল না আর এর পর পরই আমি নিজের ওয়েবসাইট তৈরীর কাজে ঝুঁকে পড়েছিলাম।

নতুন ওয়েবসাইট ডিজাইন করার কিছুদিন পর আমি ২০০৯ সালের জুনে অডেস্ক নামক একটি ওয়েবসাইট খুজেঁ পেলাম।

অডেস্ক কি ?

অডেস্ক একটি অনলাইন স্থান যেখানে অস্থায়ী কর্মীগণ তাদের রিজিউম, পর্টফোলিও বা জীবন বৃত্তান্ত পোস্ট করেন আর কর্মদাতারা তাদের পছন্দমত কর্মী খুজেঁ নেন। অডেস্কে অনেকগুলো কর্মক্ষেত্র রয়েছে। যেমনঃ-ডাটা এন্‌ট্রি থেকে শুরু করে গ্রাফিকস্‌ ডিজাইন, ভার্চুয়াল সহযোগী থেকে শুরু করে প্রজেক্ট ম্যানেজার আর ওয়েবসাইট নির্মাতা থেকে শুরু করে ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কাজ ইত্যাদি। তুমি যা-ই করতে পারো, তুমি এ মাধ্যমে এসে ফ্রী-তে জয়েন করে কাজ শুরু করে দিতে পারো।

শুরু করা

একবার তাদের সাইটটি দেখে নেবার পর আমি গুগলে অডেস্ক সার্চ করলাম আর তাদের বিষয়ে রিভিউ পড়তে লাগলাম। আমি তাদের নেতিবাচক রিভিউগুলো পড়লাম আর বুঝতে পারলাম যে, অডেস্ক সত্যিই কার্যকর আর আমি এখানে ভালো আয়ের পাশাপাশি একটা ভালো ক্যারিয়ারও গড়ে তুলতে পারবো। এরপর আমি অডেস্কে সাইন-আপ করলাম আর আমার নিজের ওয়ার্ক প্রোফাইলটি তৈরী করে নিলাম।

এটি কিভাবে কাজ করে?

অডেস্কে একদম বিনামুল্যে সাইন-আপ করা যায় আর কর্মদাতারাও এখানে বিনামুল্যে তাদের চাকরী পোস্ট করে থাকেন। অডেস্কে তুমি প্রথমে বিভিন্ন চাকরি খুঁজবে, সেগুলো করার আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করবে এরপর তুমি তোমার চাকরিদাতাকে তোমাকে কাজ দেওয়ার অপেক্ষা করবে। চাকরিদাতাগণ চাইলে নিজেই সরাসরি লোক খুঁজে বের করতে পারেন।

চাকরির ধরন ১।পারিশ্রমিক হবে নির্ধারিত মুল্যেঃ

যেখানে চাকরিদাতা তোমাকে দিয়ে কাজ করাবে এবং কাজ শেষে পারিশ্রমিক দিবে। নির্ধারিত মুল্যের চাকরি সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে আর পারিশ্রমিকের কোন নিশ্চয়তাও নেই। কাজ শেষ হওয়ার পর এটা চাকরিদাতার উপর নির্ভর করে তারা কি টাকা দিবে অথবা দিলে কত দিবে।

২।পারিশ্রমিক হবে ঘন্টায়ঃ

আওয়ারলি কাজ বা ঘন্টা হিসাব কাজ মানে তুমি প্রতি ঘন্টার হিসাবে পারিশ্রমিক পাবে। এজন্যে তোমার যা করতে হবে তা হলো, অডেস্ক টিম এপ্‌লিকেশন ডাউনলোড করে সেটি তোমার কম্পিউটারে ইন্‌স্টল করে নেওয়া। ঘন্টা হিসাব কাজ পেয়ে গেলে সেই এপ্‌লিকেশনে লগ-ইন করো আর তোমার কর্মঘন্টা শুরু করো। এপ্‌লিকেশনটি প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে স্ক্রিনশট বা পুরো মনিটরের ছবি তুলবে আর তোমার কাজের তদারকি করতে থাকবে। এরফলে চাকরিদাতারা তোমার কাজে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবে। আওয়ারলি কাজ বা ঘন্টা হিসাব কাজ বেশি ভালো কারণ এতে পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তা আছে আর এ কাজটি তোমার সর্বপরি ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়ে থাকবে।

নিজের প্রোফাইল বিল্ড-আপ বা নির্মাণ করা

শুরুতে তোমার অডেস্ক “রিডিনেস” পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।(এখানে লিখে রাখি রিডিনেস শব্দের অর্থ কিছু করার ইচ্ছা জ্ঞ্যপন করা মাত্র) যাতে তুমি তোমার অডেস্ক কর্মী প্রোফাইলে প্রবেশ করতে পারো। তোমার দক্ষতার ক্ষেত্র লিখে, পুর্বের অভিজ্ঞতা লিখে, পর্টফোলিও তৈরী করে  এবং প্রোফাইলের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে নিজের প্রোফাইল পরিপূর্ণ করো।

অডেস্কে চাকরী পাওয়া

অডেস্কের সবচাইতে কঠিন কাজ এখানে চাকরি পাওয়া। তুমি প্রোফাইল বানালে, চাকরিতে এপ্লাই করলে, চাকরিদাতার ডাকের জন্যে অপেক্ষা করলে কিন্তু কিছুই হল না। প্রথম কাজ পাওয়া অথবা একটু আচঁ করতে পারা যে কিভাবে কাজটা শুরু হবে অনেক কষ্টকর। অডেস্কে চাকরিদাতাগণ নতুন কাউকে এখানে কাজ না দেওয়ার জন্যে প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের পেছনে কোন পুর্ব অভিজ্ঞতা নেই আর পর্টফোলিওতে দেবার মতনও কিছু নেই।
গভীরভাবে চিন্তা করো…নমুনা হিসেবে কিছু কাজ পর্টফোলিওতে দাও, দু’একটা অডেস্ক পরীক্ষা দিয়ে পাস করো, সুন্দর একটা ছবি আপলোড করো প্রোফাইলের জন্যে আরো সংশ্লিষ্ট তথ্য যোগ করে দাও।
তোমার ফার্স্ট ইমপ্রেশন হিসেবে কাজ করবে তোমার কভার লেটার বা চাকরির আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত চিঠি। কভার লেটারে চমৎকার কিছু লিখবে। শুরু থেকে সুন্দর করে কভার লেটার লিখবে, নিজের কিছু কাজের নমুনাও দিও, তোমার সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের ব্যবস্থাও করে দিও আর তোমাকে কাজে নেওয়ার একটা কারণও দিও।
অডেস্কে মানুষ মাসের পর মাস লাগিয়ে দেয় কিন্তু কোন কাজ পায় না। অধিকাংশ মানুষ ৬ মাসের বেশি বেকার থাকে। আমিও অডেস্কে অনেক কাজে এপ্লাই করেছিলাম কিন্তু চাকরি পাইনি…একদিন আমি আমার প্রথম চাকরি পাই।

অডেস্কই কেন?

একজন অস্থায়ী কর্মীর জন্যে অডেস্কই কেন? এদের মত অনলাইনে আরো তো জায়গা আছে যারা তোমাকে চাকরির সুযোগ করে দিবে। যেমনঃ গেটএফ্রীলেন্সার, হায়ারএকোডার আর গুরু। কিন্তু আমি অডেস্ক-কে বেশি প্রাধান্য দিবো কারণ এখানে আমি প্রথম এসে এখানে একটা ভালো পর্টফোলিও-ও গড়ে তুলেছি। তুমি যদি শুরু করার জন্যে ভালো একটা জায়গা খুঁজছো তবে অডেস্ক এবং শুধুই অডেস্ক বেছে নাও।
অডেস্কে আসা কর্মীদের জন্যে অডেস্ক অনেকগুলো সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা তাদের(ফ্রীলেন্সারদের) সকল প্রধান আয়গুলো সাপ্তাহিকভাবে দিয়ে থাকেন। যেমনঃ- পেপেল, পেওনিয়ার ডেবিট কার্ড, মানিবুকেরস্‌ ইত্যাদি। তাদের বড় সুনাম রয়েছে আর অনলাইনে তাদের বিশাল একটা কেন্দ্র রয়েছে।
তোমার সাধারণ পর্টফোলিও নিয়ে অডেস্কে কাজ করাই উত্তম কারণ এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, আপডেট করা সহজ আর কাজ করতেও সহজতর।

নতুন কর্মীদের জন্যে আমার কিছু পরামর্শঃ

  • কখনই চিন্তা করবে না যে এখানে কোন প্রতিযোগীতা রয়েছে। যখন তুমি কাজের জন্যে এপ্লাই করতে যাবে তখন ভেবে নিবে যে, তুমিই এ কাজের জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আর কেউ নয়। এখানে অনেক নতুন নতুন কাজের সুযোগ রয়েছে আর কর্মীর তুলনায় কর্ম অনেক বেশি। তাহলে, কাজে নেমে পড়ো।
  • সকল প্রধান ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যমে থাকার চেষ্টা করো যেমনঃ- ইয়াহু মেসেঞ্জার, গুগল টক, এআইএম, স্কাইপি এবং ইমেইল। যাতে তোমার চাকরিদাতাগণ তোমাকে যখন তাদের দরকার তখন তোমাকে খুজঁতে পারে।
  • তোমার চাকরিদাতাদের কাজ তুমি কোনক্রমে করতে অপারগ হলে তাদের একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু তাদের কখনো ঝুলন্ত অবস্থায় রেখো না।
  • সমাধান খুজঁবে শুধুই সমাধান…শুধু টাকার পিছনে ঘুরবে না। তোমার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে এই ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন হবে তোমার ফিডব্যাক বা চাকরিদাতাদের তোমার প্রতি মনোভাব।
  • তোমার পারিশ্রমিকের হার একদম কম নির্ধারিত করো না; প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখার চেষ্টা করো আর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছু ডলার কম চাইতে পারো।
  • নিয়মিতভাবে চাকরিদাতাদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করো আর তাদের নিয়মিত কাজের সর্বশেষ অগ্রগতির খবর দিতে থাকো।
  • চাকরিদাতাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলো। এর ফলে তাদের সাথে একটা বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠবে আর ভবিষ্যতে আরো কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
  • যদি তোমার যথেষ্ট কাজ থাকে তবে নতুন করে কাজ নিও না।
  • বেশি টাকার জন্যে আরো অনেক ঘন্টা কাজ করা যায়, তাই বলে শুধু কাজই করে যাবে না। মাঝে মাঝে বিরতি বা ছুটিও নিয়ে নিতে পারো।
  • ঘন্টা হিসাব কাজে বেশি কাজের অভিজ্ঞতা ও সম্মান কুড়িয়ে তোমার প্রতি ঘন্টার পারিশ্রমিকের হার বাড়িয়ে দাও।

আমার অডেস্ক ক্যারিয়ার

এতো খাঁটা-খাঁটনির পর তুমি নিশ্চয়ই জানতে চাও আমার অডেস্ক প্রোফাইল সম্পর্কে। আমি অডেস্ক নিয়ে ভালোই কাজ করছি আর আমার প্রথম কাজটি পেতে প্রায় ১ মাস লেগে গিয়েছিল। অডেস্কে আমার পাবলিক প্রোফাইলটি দেখে নিতে পারো। আমাকে কাজও দিতে পারো; আমি ওয়ার্ডপ্রেস আর থিসিস থিম ডিজাইন কাস্টমাইজেশন করে থাকি।
আমার হাতে বর্তমানে অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।

সূত্রঃ এখান থেকে । 

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More